কক্সবাংলা সম্পাদকীয়(১১ নভেম্বর) :: বর্তমান সরকার রেলপথ উন্নয়নে নানামুখী কাজ করছে। সর্বশেষ গত ১১ নভেম্বর অনানুষ্ঠানিকভাবে চট্টগ্রামের দোহাজারী-কক্সবাজার রুটে বহুল প্রতীক্ষিত রেল চলাচল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
একই সঙ্গে তিনি দৃষ্টিনন্দন কক্সবাজার রেলস্টেশন উদ্বোধন করেন। রামু স্টেশন থেকে প্রধানমন্ত্রী রামু সেনানিবাসে যান। সেখান থেকে তিনি যান মাতারবাড়ী। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে রেলওয়ের।
এতে অর্থনৈতিক উন্নয়নেও বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে যাচ্ছে নতুন রেলপথটি। এর মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে নিরবচ্ছিন্নভাবে নতুন যুগের সূচনা হলো।
এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে কক্সবাজারে পর্যটনশিল্পের নতুন দিগন্তের সূচনা হবে। এটি সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের (ফার্স্ট ট্র্যাক) অন্তর্ভুক্ত একটি প্রকল্প।
ঢাকা-কক্সবাজার বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হবে আগামী ১ ডিসেম্বর। এতে কম সময়ে, কম খরচে আরামদায়কভাবে যাতায়াত করতে পারবেন এই অঞ্চলের মানুষ। দেশের অর্থনীতির গতি বাড়বে বহুগুণ। হবে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথের দূরত্ব ১৫০ কিলোমিটার।
দোহাজারী থেকে সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, রামু হয়ে পর্যটন নগরী কক্সবাজার পর্যন্ত চলে গেছে এই রেললাইনটি। বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি মেগা প্রকল্প এটি, গ্রহণ করা হয় ২০১০ সালের ১ জুলাই।
তিন বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ১২ বছরেও তা হয়নি। চার দফায় মেয়াদ বৃদ্ধি করে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সময় নির্ধারিত হয়েছে। ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১৫০ কিলোমিটার রেললাইন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সম্প্রতি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় নির্মাণাধীন দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ। এটি ট্রেন চলাচল শুরু করার ক্ষেত্রে তেমন একটা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি। চাহিদা থাকায় বাংলাদেশে রেলের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। বাংলাদেশ রেলে সোনালি যুগের সূচনা করার সময় বয়ে চলেছে।
দেশের ভেতরে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে রেল। কিন্তু নানা কারণে নিরাপদ বাহন হয়ে উঠেছে অনিরাপদ। বিষয়গুলো গুরুত্ব দেয়া উচিত। দেশের অধিকাংশ রেলপথে ঝুঁকি নিয়ে চলছে রেল। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান মাধ্যম হলো রেলওয়ে। অথচ দীর্ঘ কয়েক দশক অবহেলার শিকার হয়ে আসছিল রেলওয়ে।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হয়ে রেলের দিকে দৃষ্টি ফেরায়। স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় হয়েছে রেলওয়ে। রেল উন্নয়নে মহাপরিকল্পনাও হাতে নেয়া হয়েছে, যা দেশবাসীকে খুবই আশান্বিত করেছে। তবে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে শ্লথগতি, সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি অনাকাক্সিক্ষত প্রতিবন্ধকতায় পড়ার খবর আমাদের স্বভাবতই হতাশ করে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী সময়মতো প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে সত্যিকার অর্থে রেল যোগাযোগে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। তার সুফল পড়বে দেশের সার্বিক অগ্রগতিতে। পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ৪৩ থেকে ৪৭ জেলা রেল যোগাযোগে যুক্ত হয়েছে।
এটিও আমাদের মাইলফলক অর্জন বলা যায়। অর্থনৈতিকভাবে সম্ভাবনাময় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনটি শুধু কক্সবাজারকেন্দ্রিক পর্যটন ব্যবসাতে সুফল আনেব না; ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের অংশ হওয়ায় আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যেও বিপুল অবদান রাখবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।
Posted ১:৩৪ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৩
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta